শবে বরাতের আমল ও দোয়া, ফজিলত কি কি
শবে বরাতের আমল ও দোয়া, ফজিলত কি কি

শবে বরাতের আমল ও দোয়া, ফজিলত কি কি

(শবে বরাতের আমল ও দোয়া, ফজিলত কি কি) শবে বরাতের আমল, শবে বরাতের ফজিলত, শবে বরাতের ইবাদত, শবেবরাতের তাসবিহ, শবে বরাতের বয়ান, ইত্যাদি সংক্রান্ত নিয়ে আজকে আমাদের এই আলোচনা চলুন আর দেরি না করে শবে বরাত সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করি। 

শাবান মাসের 14 তারিখের দিবাগত রাতকেই সাধারণত শবে বরাত বলা হয় যদি হাদিসে ভাষায় বলা যায় তাহলে এ রাতকে লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান বা মধ্য শাবানের রজনী বলা হয়ে থাকে।

শাবান মাসের এই দিবাগত রাতের ফজিলত সম্পর্কে কোরআনে সরাসরি উল্লেখ না থাকলে বা নির্দেশনা না থাকলেও হাদিস শরীফে নির্ভরযোগ্য সনদ বা বর্ণনা সূত্রে একাধিক হাদিস এ রাতের সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে।

শবে বরাতের ফজিলত

মুয়াজ বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রে তার সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশফিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনে হিব্বান, হাদিস,  ৫৬৬৫)

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শবে বরাতে রাত্রে দীর্ঘ সময় ধরে নফল নামাজ পড়তেন।এই বিষয়ে অন্য এক হাদীসে আম্মাজান হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা তিনি বর্ণনা করেছেন যে—

`একবার আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো- তিনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বলেন হে আয়েশা তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না- হে আল্লাহ রাসূল। আপনার এই দীর্ঘ সেজদা দেখে আমার এই আশঙ্কা হয়েছিল আপনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন।

তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালো জানেন।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন এরশাদ করলেন যে, এটা হল অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাত্রে তার বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা কারীদেরকে ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। (শুআবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩/৩৮২-৩৮৩; তাবারানি: ১৯৪)

শবে বরাতে নামাজের নিয়ম

শবে বরাতের রাত্রে আমল হিসেবে নফল নামাজ পড়া উত্তম। তবে এই রাতে নফল নামাজ পড়ার আলাদা কোন নিয়ম বা নিয়ত নেই। অন্যান্য সকল নফল নামাজ যেভাবে পড়া হয় এই দিন রাতেও সেভাবে স্বাভাবিক নিয়মে নামাজ পড়তে হবে।

কেউ যদি শবে বরাতের আমল হিসেবে এ রাতে নফল নামাজ পড়ার আলাদা কোন নিয়ম বা নিয়ত সাব্যস্ত করলে তা বিদয়াত হিসেবে গণ্য হবে। কেননা শবে বরাতের নামাজ পড়ার কোন নিয়ম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বর্ণনা করেননি।

যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বর্ণনা করেননি বা সাহাবীরাও পালন করেননি এমন কোন বিষয়ে এবাদত বা নির্দিষ্ট করে আমল তৈরি করলে তা বিদয়াত অন্তর্ভুক্ত হবে। বিদয়াত আবিষ্কারকদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আল্লাহর রাসূল।

অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব আর সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসল্লামের আদর্শ। সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো (দীনের মধ্যে) নব-উদ্ভাবিত বিষয়। এবং (দীনের মধ্যে)উদ্ভাবিত সবকিছুই বিদআত। প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।(মুসলিম, হাদিস, ১৫৩৫; নাসায়ি, হাদিস, ১৫৬০)

শবে বরাতের নামাজের দোয়া

শবে বরাতের আমল হিসেবে একজন মুসলমান যে সকল ইবাদত করবে পুরোটাই নফল ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। তাই বেশি করে এ রাতে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, নামাজ, সকল কিছু নফল হিসেবে গণ্য হবে এবং কোনটাই ফরজ ওয়াজিব বা অন্ততপক্ষে সুন্নতে মুয়াক্কাদাও নয়।

এজন্য কেউ এ রাতে কোন নফল নামাজ পড়লে তা অন্যান্য যেকোনো নামাজের মত পড়বে নফল নামাজের সানা, সুরা ফাতিহা, সূরা মিলানোর, বৈঠক, তাশাহুদ, দুরুদ ও দোয়া মাসুরা সব স্বাভাবিক নিয়মে পালন করতে হবে

তবে অবশ্যই নামাজের শেষে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারেন তবে এ রাতে নফল নামাজের জন্য নির্দিষ্ট করে কোন দোয়া নেই। তবে রজব ও শাবান মাসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বরকত চেয়ে আল্লাহর কাছে যে দোয়াটি করতেন চাইলে তা করতে পারেন দোয়াটি হল:-

আরবি :

اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান।

অর্থ : হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান আমাদের নসিব করুন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৫৯)

আল্লাহ তাআলা সবাইকে কুরআন হাদিসের আলোকে সঠিকভাবে আমল করার এবং বিদআত থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। (আমীন)

শবেবরাতের অর্থ কি

শব ফার্সি শব্দ যার অর্থ রাত, এবং বরাত অর্থ মুক্তি, নাজাত বা ভাগ্য অর্থাৎ ”শবে বরাত মানে হলো মুক্তির রাত বা রহমতের রাত”

শবে বরাত কি শব্দ?

শবে বরাত ফারসি ভাষার শব্দ

শবে বরাতে কি কি করনীয়?

শবে বরাতে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

শেষ কথা

ইতিমধ্যে আপনারা শবেবরাতের আমল সম্পর্কে জানতে পারলাম। তো ইনশাল্লাহ আল্লাহতালা আমাদেরকে সকলের আমল কবুল করুনএবং বুঝেশুনে আমল করার তৌফিক দান করুন আমীন।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *